ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করার দাবিতে সমাবেশ

নিজস্ব প্রতিনিধি :

গত বছরে মিয়ানমার সেনাবহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নজিরবিহীন বর্বরোচিত হামলা, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যা’র ঘটনা ঘটে। নিপীড়িন-নির্যাতন, গণহত্যা, ঘর-বাড়িতে আগুন ও ধর্ষণের ঘটনায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিপুল সংখ্যক মানুষ নিজ দেশ মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। এর প্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) এবং হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম (এইচআরডিএফ)-এর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়িন-নির্যাতন ও গণহত্যা’র বিরুদ্ধে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের আহ্বান জানানো হয়। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখে কক্সবাজারে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে করনীয় বিষয়ক কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়েছিল। উক্ত দাবিগুলোর মধ্যেÑ ১. মিয়ানমার সরকারের পরিকল্পিত জাতিগত নিধন ও গণহত্যা’র বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে উপস্থাপনের মাধ্যমে এর বিচার; ২. মিয়ানমার রাষ্ট্র কর্তৃক রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে ‘কফি আনান কমিশন’-এর সুপারিশ বাস্তবায়ন; ৩. বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক মর্যাদাসহ দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ দাবিগুলোর বাস্তবায়নে কোন প্রক্রিয়াই শুরু হয়নি।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গত ২৩ নভেম্বর ২০১৭ তারিখে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সরকারের মাঝে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয় এবং যার প্রেক্ষিতে রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের অঙ্গিকারের মাধ্যমে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়। গত ১৫ জানুয়ারি ২০১৮, মিয়ানমারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দুই বছরের মধ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন এবং ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করারও ঘোষনা দেন। যার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিায়ানমারের কাছে প্রথম দফায় ৮০০০ জনের একটি তালিকা হস্থান্তর করা হলেও মিয়ানমার মাত্র ৩৭৪ জনকে প্রত্যাবাসনে সম্মতি জানায়। পরবর্তী সময়ে (১ মে ২০১৮) মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়, উপরোক্ত তালিকা থেকে তারা ১১০০ জনকে প্রত্যাবাসন করবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে মিয়ানমার সরকারের বিভিন্ন সময়ে নানা বিভ্রান্তিকর বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতীয়মান হয়েছে যে, কার্যত তারা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে মোটেই আন্তরিক নয়।

আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি, কক্সবাজার জেলার সীমিত জায়গায় ব্যাপক সংখ্যক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষ অবস্থান করার কারণে এ অঞ্চলের মানুষের ওপর আর্থ-সামাজিক ও মনোস্তাত্ত্বিক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এতো ব্যাপক সংখ্যক জনগোষ্ঠীর আশ্রয়লাভের ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহিন। এমতাবস্থায় হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম (এইচআরডিএফ) এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনসহ তাদের বিষয়ে নিম্নোক্ত দাবিসমূহ উপস্থাপন করছেÑ

১. বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মানবিক মর্যাদাসহ দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ।
২. মিয়ানমার সরকারের পরিকল্পিত জাতিগত নিধন ও গণহত্যা’র বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার।
৩. মিয়ানমার রাষ্ট্র কর্তৃক রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে ‘কফি আনান কমিশন’-এর সুপারিশ বাস্তবায়নে জাতিসংঘের জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ।

হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার্স ফোরাম (এইচআরডিএফ)-কক্সবাজার এর আহবায়ক এড. অরূপ বড়–য়া তপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা, আসকের সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির প্রমুখ। সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন এইচআরডিএফ-কক্সবাজার এর সদস্য সচিব মিজানুর রহমান বাহাদুর। এছাড়া সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন এইচআরডিএফ-কক্সবাজারের যুগ্ম আহবায়ক এড. শুক্কুর আলী, আসক-এর সিনিয়র ইনভেস্টিগেটর অনির্বান সাহা, ইনভেস্টিগেটর হাসিবুর রহমান, এইচআরডিএফ সদস্য মঅং হ্্েরলা, দিপক বড়–য়া, আব্দুর রশীদ,এইচ.এম নজরুল ইসলাম প্রমুখ।

পাঠকের মতামত: